রাজধানীর ইডেন মহিলা কলেজ শাখা ছাত্রলীগের অন্তর্দ্বন্দ্ব চরমে পৌঁছেছে। গতকাল বিকালে নিজেদের বিরুদ্ধে আসা চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অভিযোগের জবাব দিতে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তামান্না জেসমিন রিভা ও সাধারণ সম্পাদক রাজিয়া সুলতানার সংবাদ সম্মেলন চলাকালেই মারামারিতে জড়িয়েছে সভাপতি-সম্পাদকের অনুসারী ও কমিটির বিক্ষুব্ধ একটি অংশ।

এতে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছে। সভাপতি রিভা ও বিক্ষুব্ধ অংশের নেত্রী সহ-সভাপতি সুস্মিতা বাড়ৈসহ বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে শাখা ছাত্রলীগের সেক্রেটারি রাজিয়া সুলতানা বিকালের মারামারির পর থেকে কলেজের প্রশাসনিক ভবনে অবরুদ্ধ ছিলেন। কিছুক্ষণ আগে তাকে পুলিশি প্রহরায় কলেজের বাইরে বের করে নিয়ে আসা হয়েছে। একে নিজেদের বিজয় আখ্যা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে অপর অংশের নেতা-কর্মীরা। পরে আনন্দ মিছিল বের করা হয়।

সর্বশেষ শনিবার দিবাগত রাতে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেওয়াকে কেন্দ্র করে নির্যাতিত হওয়ার অভিযোগ আনেন শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল সংগঠনটির বিক্ষুব্ধ একটি অংশ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থী নির্যাতন, চাঁদাবাজি, সিট বাণিজ্য ছাত্রীদের কু-প্রস্তাব দেওয়াসহ বেশ কিছু অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন।

একই দিন বিকালে অভিযোগের জবাব দিতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তামান্না ও রাজিয়া। এ সময় তামান্না বলেন, কমিটি গঠনের পর থেকেই যারা অঘটন ঘটিয়ে যাচ্ছে, তারাই আজকেও অঘটন ঘটিয়েছে। তারা আজকে সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনেছে। আমাদের ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও তারা (বিক্ষুব্ধরা) তাদের বয়কট করেছে। কিন্তু আমরা চাই, সুষ্ঠু তদন্ত করে যারা দোষী তাদের শাস্তি হোক।

সংবাদ সম্মেলন চলাকালেই বিক্ষুব্ধ অংশের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তর্কাতর্কির জেরে আবারও মারামারিতে জড়িয়ে পড়ে উভয় অংশ। বেশ কিছুক্ষণ ধরে উভয়পক্ষে ধস্তাধস্তি ও ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় একে অপরকে চেয়ার ছুড়ে মারধর করতে থাকেন। একজনকে মাটিতে ফেলেও মারধর করতে দেখা যায়। পরে একটি অ্যাম্বুলেন্সে করে সভাপতি তামান্নাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়।

এ প্রতিবেদন লেখার সময় ইডেন কলেজে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। ক্যাম্পাসে পুলিশ অবস্থান করছে। এর আগে, শনিবার মধ্যরাতে সিট বাণিজ্য নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলায় তামান্না জেসমিন রিভা ও রাজিয়া সুলতানার নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেন সহ-সভাপতি জান্নাতুল ফেরদৌস। তিনি গণমাধ্যমের কাছে অভিযোগ করেন, তাকে হলের একটি কক্ষে আটকে নির্যাতন করা হয়েছে। এ ছাড়াও তার আপত্তিকর ছবিও তুলে রেখেছেন সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও তাদের সমর্থকেরা। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে আত্মহত্যার হুমকিও দেন তিনি। এ ঘটনার জেরে রাতেই সভাপতি-সম্পাদকের বহিষ্কার চেয়ে মিছিল ও বিক্ষোভ করে ছাত্রলীগের একটি অংশ। পরে সভাপতি ও সম্পাদকের অনুসারীরাও তাদের পক্ষে মিছিল করে। উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেলে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়ায়। এ ঘটনায় জান্নাতুল ফেরদৌস প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।